সেই মার্চ মাস! সেই সাধু পিতরের চত্বর! সেই পোপ ফ্রান্সিস!
এইতো সেদিনের কথা। তারিখটা ছিল ২৭.৩.২০২০ খ্রীষ্টাব্দ। টিভির পর্দার সামনে বসে আছি। গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে জানতে পেরেছি পোপ ফ্রান্সিস সাধু পিতরের চত্বরের প্রার্থনা করবেন মানবজাতির কল্যাণে । তিনি সবাইকে অনুরোধ করেছেন এই দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে তাঁর সাথে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
সন্ধ্যা ৬টা একটু আগে থেকেই ভাতিকান টিভি সরাসরি সম্প্রচারণ শুরু করলো সাধু পিতরের চত্বর থেকে। জনমানবশূণ্য ভাতিকানের সাধু পিতরের চত্বরটা দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। কতবার এসেছি এই চত্বর। কখনোবা একা আবার কখনোবা অন্যদের সাথে। আমার জীবনের অনেক স্মৃতি আছে এই চত্বরকে ঘিরে। সবর্দা এই চত্বরটা থাকে জনমানব পরিপূর্ণ। কিন্তু আজ এই চত্বরটাকে বড্ড অচেনা লাগছে। এক গভীর নিরবতা চারিদিকটা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। প্রকৃতিতে একটা বিষন্নতার ছাপ। অনেকটা হঠাৎ করেই স্মৃতির মানসপটে ভেসে উঠলো ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দের কথা। দিনটি ছিল মার্চ মাসের ১৩ তারিখ । সেদিনও আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল । মাঝখানের তফাৎ শুধু সাত বছর। কিন্তু এই দুটি দিনই কিন্তু অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দুটো ঘটনার কেন্দ্রস্থল হলো সাধু পিতরের চত্বর, আর মধ্যমণি হলেন পোপ ফ্রান্সিস।
ফিরে দেখা ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ ই মার্চ
দিনটি ছিল বুধবার। ঘড়ির কাটাঁ ৭ টা ছুঁই ছুঁই। ভাতিকানের চুম্বি থেকে বের হলো সাদা ধোঁয়া। সারা বিশ^ জেনে গেছে যে কাথলিক মন্ডলী পেয়ে গেছে নতুন পোপ। অনেকেই গভীর আগ্রহের সঙ্গে টিভির সামনে অপেক্ষা করছে নতুন পোপ দেখার জন্য। আর রোম শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই র্ ওনা দিয়েছেন সাধু পিতরের চত্বরের উদ্দেশ্যে। আমরাও কয়েকজন তাড়াতাড়ি করে রওনা দিলাম ভাতিকানের উদ্দেশ্যে। বাসে জায়গা না পেয়ে আমরা হেঁটেই রওনা দিলাম। সেখানে পৌঁছে দেখি কানায় কানায় পরিপূর্ণ সাধু পিতরের চত্বর। সবার মধ্যে উৎকন্ঠা- কে হলো কাথলিক মন্ডলীর নতুন কান্ডারী। চারিদিকে ফিসফিস কানাঘুষো। অবশেষে ঘন্টাখানেক অপেক্ষার শেষে, ঘোষিত হলো তাঁর নাম। জর্জ ভারগোলিও। যীশু সংঘের (জেসুইট) সদস্য। লাতিন আমেরিকার সন্তান। চিরাচরিত পোশাকের বাইরে গিয়ে সে জনসন্মুখে হাজির হলেন অতি সাধারণ পোশাকে। দু-চারটা কথা বললেন । তাঁর শব্দচয়নে স্থান পেল আম জনতার মুখের ভাষা। সবাইকে নিয়ে সে প্রার্থনা করলেন। সবার কাছে বিন¤্রচিত্তে প্রার্থনা ও আশির্বাদ চাইলেন। তাঁরপর দুহাত ভরে উপস্থিত সবাইকে আশির্বাদ করলেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বিশ^বাসী উপলবদ্ধি করতে পারলো তাঁর আধ্যাত্মিক গভীরতা Ñএকজন ঈশ^রের নির্ভরশীল, প্রার্থনাশীল মানুষ । প্রেরিত শিষ্য পিতরের একজন যথার্থ উত্তরসূরী । তাঁর শারীরিক ও মুখের ভাষা প্রমাণ করলো যে, তাঁর চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানব কল্যাণ সাধন করা। মনের অগোচরে ভাবলাম ঈশ^র তাঁর মনোনীতজনকে পাঠিয়েছেন আমাদের মাঝে। তাঁর মধ্য দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলছেন। ঈশ^র মানুষের মিলন বন্ধন জানি না আবার কখন এইভাবে ধরা পড়বে।
২০২০ খ্রীষ্টাব্দের ২৭শে মার্চ
দিনটা ছিল শুক্রবার। রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল । সারাবিশ্বে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। অজানা এক ভয় সবার মনে। কি হতে যাচ্ছে সারা বিশে^। বিশে^র প্রায় সবগুলো দেশই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমার মতো অনেকে হয়তো টিভির সামনে বসে বিচলিত। অবশেষে উপস্থিত হলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ । সাদা শুভ্্র পোশাকে, ধীর স্থির গতিতে পোপ ফ্রান্সিস উপস্থিত হলেন সাধু পিতরের চত্বরের । তিনি আগে অনেকবার এসেছেন এই চত্বরের। কিন্তু প্রার্থক্য হলো এবার জনমানব শূণ্য চত্বর। ধীর স্থির গতিতে তিনি হেঁটে গেলেন। তাঁর মুখখানি দেখে মনে হলো জগতের সমস্ত ব্যথা বেদনা সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পবিএ বাণী পাঠের আলোকে বললেন মানুষের মনের কথা। তাঁর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো ঈশ^রের নিকট হাজারো মানুষের মনের ব্যাকুল প্রার্থনা। তাঁর শব্দচয়নে স্থান পেল আম জনতার মুখের ভাষা । সেখানে ছিলনা কোন দার্শনিক উক্তি। আকুল আবেদন জানালেন ঈশ^রের উপর বিশ^াস রাখার। মা মারীয়ার প্রতিকৃতিতে ভক্তি প্রদর্শণ করলেন। নীরবে প্রাথর্না করলেন ক্রুশের সামনে। তাঁর ভক্তি ভালোবাসা মানুষের মন জয় করলো। নীরবে প্রাথর্নার পর সবাইকে আশির্বাদ করলেন। তারপর নীরবে আবার চলে গেলেন সাধু পিতরের চত্বর থেকে। মনের অগোচরে আবারো ভাবলাম ঈশ^র তাঁর মনোনীতজনকে পাঠিয়েছেন আমাদের মাঝে। তাঁর মধ্য দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলছেন। ঈশ^র মানুষের মিলন বন্ধন জানি না আবার কখন এইভাবে ধরা পড়বে¬?
টিভি দেখতে দেখতে কখন যে চোখের কোণে দুফোঁটা জল এসে গেল বুঝতে পারেনি। দেখতে দেখতে ঘন্টাখানেক পার হয়ে গেল। এবার যেতে হবে অন্যকাজে।
বছর ঘুরে আবারও মার্চ আসবে। পোপ হয়তো আবারো আসবেন প্রার্থনা করার জন্য। কিন্তু ঈশ^র মানুষের মিলন বন্ধন জানি না আবার কখন এইভাবে ধরা পড়বে...
এইতো সেদিনের কথা। তারিখটা ছিল ২৭.৩.২০২০ খ্রীষ্টাব্দ। টিভির পর্দার সামনে বসে আছি। গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে জানতে পেরেছি পোপ ফ্রান্সিস সাধু পিতরের চত্বরের প্রার্থনা করবেন মানবজাতির কল্যাণে । তিনি সবাইকে অনুরোধ করেছেন এই দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে তাঁর সাথে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
সন্ধ্যা ৬টা একটু আগে থেকেই ভাতিকান টিভি সরাসরি সম্প্রচারণ শুরু করলো সাধু পিতরের চত্বর থেকে। জনমানবশূণ্য ভাতিকানের সাধু পিতরের চত্বরটা দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। কতবার এসেছি এই চত্বর। কখনোবা একা আবার কখনোবা অন্যদের সাথে। আমার জীবনের অনেক স্মৃতি আছে এই চত্বরকে ঘিরে। সবর্দা এই চত্বরটা থাকে জনমানব পরিপূর্ণ। কিন্তু আজ এই চত্বরটাকে বড্ড অচেনা লাগছে। এক গভীর নিরবতা চারিদিকটা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। প্রকৃতিতে একটা বিষন্নতার ছাপ। অনেকটা হঠাৎ করেই স্মৃতির মানসপটে ভেসে উঠলো ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দের কথা। দিনটি ছিল মার্চ মাসের ১৩ তারিখ । সেদিনও আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল । মাঝখানের তফাৎ শুধু সাত বছর। কিন্তু এই দুটি দিনই কিন্তু অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দুটো ঘটনার কেন্দ্রস্থল হলো সাধু পিতরের চত্বর, আর মধ্যমণি হলেন পোপ ফ্রান্সিস।
ফিরে দেখা ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ ই মার্চ
দিনটি ছিল বুধবার। ঘড়ির কাটাঁ ৭ টা ছুঁই ছুঁই। ভাতিকানের চুম্বি থেকে বের হলো সাদা ধোঁয়া। সারা বিশ^ জেনে গেছে যে কাথলিক মন্ডলী পেয়ে গেছে নতুন পোপ। অনেকেই গভীর আগ্রহের সঙ্গে টিভির সামনে অপেক্ষা করছে নতুন পোপ দেখার জন্য। আর রোম শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই র্ ওনা দিয়েছেন সাধু পিতরের চত্বরের উদ্দেশ্যে। আমরাও কয়েকজন তাড়াতাড়ি করে রওনা দিলাম ভাতিকানের উদ্দেশ্যে। বাসে জায়গা না পেয়ে আমরা হেঁটেই রওনা দিলাম। সেখানে পৌঁছে দেখি কানায় কানায় পরিপূর্ণ সাধু পিতরের চত্বর। সবার মধ্যে উৎকন্ঠা- কে হলো কাথলিক মন্ডলীর নতুন কান্ডারী। চারিদিকে ফিসফিস কানাঘুষো। অবশেষে ঘন্টাখানেক অপেক্ষার শেষে, ঘোষিত হলো তাঁর নাম। জর্জ ভারগোলিও। যীশু সংঘের (জেসুইট) সদস্য। লাতিন আমেরিকার সন্তান। চিরাচরিত পোশাকের বাইরে গিয়ে সে জনসন্মুখে হাজির হলেন অতি সাধারণ পোশাকে। দু-চারটা কথা বললেন । তাঁর শব্দচয়নে স্থান পেল আম জনতার মুখের ভাষা। সবাইকে নিয়ে সে প্রার্থনা করলেন। সবার কাছে বিন¤্রচিত্তে প্রার্থনা ও আশির্বাদ চাইলেন। তাঁরপর দুহাত ভরে উপস্থিত সবাইকে আশির্বাদ করলেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বিশ^বাসী উপলবদ্ধি করতে পারলো তাঁর আধ্যাত্মিক গভীরতা Ñএকজন ঈশ^রের নির্ভরশীল, প্রার্থনাশীল মানুষ । প্রেরিত শিষ্য পিতরের একজন যথার্থ উত্তরসূরী । তাঁর শারীরিক ও মুখের ভাষা প্রমাণ করলো যে, তাঁর চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানব কল্যাণ সাধন করা। মনের অগোচরে ভাবলাম ঈশ^র তাঁর মনোনীতজনকে পাঠিয়েছেন আমাদের মাঝে। তাঁর মধ্য দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলছেন। ঈশ^র মানুষের মিলন বন্ধন জানি না আবার কখন এইভাবে ধরা পড়বে।
২০২০ খ্রীষ্টাব্দের ২৭শে মার্চ
দিনটা ছিল শুক্রবার। রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল । সারাবিশ্বে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। অজানা এক ভয় সবার মনে। কি হতে যাচ্ছে সারা বিশে^। বিশে^র প্রায় সবগুলো দেশই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমার মতো অনেকে হয়তো টিভির সামনে বসে বিচলিত। অবশেষে উপস্থিত হলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ । সাদা শুভ্্র পোশাকে, ধীর স্থির গতিতে পোপ ফ্রান্সিস উপস্থিত হলেন সাধু পিতরের চত্বরের । তিনি আগে অনেকবার এসেছেন এই চত্বরের। কিন্তু প্রার্থক্য হলো এবার জনমানব শূণ্য চত্বর। ধীর স্থির গতিতে তিনি হেঁটে গেলেন। তাঁর মুখখানি দেখে মনে হলো জগতের সমস্ত ব্যথা বেদনা সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পবিএ বাণী পাঠের আলোকে বললেন মানুষের মনের কথা। তাঁর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো ঈশ^রের নিকট হাজারো মানুষের মনের ব্যাকুল প্রার্থনা। তাঁর শব্দচয়নে স্থান পেল আম জনতার মুখের ভাষা । সেখানে ছিলনা কোন দার্শনিক উক্তি। আকুল আবেদন জানালেন ঈশ^রের উপর বিশ^াস রাখার। মা মারীয়ার প্রতিকৃতিতে ভক্তি প্রদর্শণ করলেন। নীরবে প্রাথর্না করলেন ক্রুশের সামনে। তাঁর ভক্তি ভালোবাসা মানুষের মন জয় করলো। নীরবে প্রাথর্নার পর সবাইকে আশির্বাদ করলেন। তারপর নীরবে আবার চলে গেলেন সাধু পিতরের চত্বর থেকে। মনের অগোচরে আবারো ভাবলাম ঈশ^র তাঁর মনোনীতজনকে পাঠিয়েছেন আমাদের মাঝে। তাঁর মধ্য দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলছেন। ঈশ^র মানুষের মিলন বন্ধন জানি না আবার কখন এইভাবে ধরা পড়বে¬?
টিভি দেখতে দেখতে কখন যে চোখের কোণে দুফোঁটা জল এসে গেল বুঝতে পারেনি। দেখতে দেখতে ঘন্টাখানেক পার হয়ে গেল। এবার যেতে হবে অন্যকাজে।
বছর ঘুরে আবারও মার্চ আসবে। পোপ হয়তো আবারো আসবেন প্রার্থনা করার জন্য। কিন্তু ঈশ^র মানুষের মিলন বন্ধন জানি না আবার কখন এইভাবে ধরা পড়বে...
No comments:
Post a Comment